Street children বা পথ শিশু।

image

স্যার ৫ টেহা দ্যান, সক্কাল থেইয়া কিছুই খাই নাই,,,,
৫ টেহা দ্যান স্যার…
কথাগুলো বলছিল পথ শিশু রনি। উত্তরা নর্থ টাওয়ারের সামনে রিকশা থেকে নামতেই ঘিরে ধরলো ৬-৭ বছর বয়সী ওরা ২ জন।

আরেকজনের নাম মুরাদ। মুরাদকে
খাবার কথা জিজ্ঞাসা করাতে বললো, ‘কতদিন গোশত দিয়া ভাত খাই না, আমরা রুটি কলা খাইয়া থাহি।‘ তোমরা কোথায় থাকো? একথা জিজ্ঞাসা করাতেই ২ জনই হাসতে হাসতে দৌড় মেরে পাশে আসা অটো রিকশা থেকে নামা কয়েকজন নতুন লোকের সামনে সেই সুর তুলে টাকা চাইতে লাগলো।

এদেরকে ছিন্নমূল শিশু বা
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু বা পথশিশু যে নামেই ডাকি না কেন শহরের চলার পথে সন্ধান মিলবে এমন হাজারো শিশু। এদের বেশির ভাগ শিশুরই মা- বাবা নেই। রাত্রি যাপন করে রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাথে,
মার্কেট বা অফিসের বারান্দায়।
ছিন্ন, নোংরা বস্ত্র আর হাত-পায়ে
ময়লা, কাদা লাগানো এসব শিশুর
সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে। তবে সে কাজ লেখাপড়া বা খেলার জন্য নয়। দিনের সবটুকু সময় তাদের খাটতে হয় খাবারের জন্য।

দেশে পথশিশুর সংখ্যা কম নয়।
সম্প্রতি জাতিসংঘ্যের দেয়া তথ্য
অনুযায়ী, বাংলাদেশে পথশিশুর
সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ।

image

সাত বছরের শিশু জুয়েল। বাবা-মার বিচ্ছেদের পর মানিকগঞ্জ  থেকে চলে আসে ঢাকায়। আশ্রয় নেয় কমলাপুর রেল স্টেশনে। সেখানে পরিচয় হয় আরো কয়েক পথশিশুর সঙ্গে। তারপর পথশিশুদের সঙ্গেই জুয়েলের চলাফেরা শুরু। রাস্তায় রাত কাটানো, সারাদিন ধুলো-ময়লার সঙ্গে সময় কাটানো।

এভাব জুয়েলের মতো আরো অনেক পথশিশুর দিন কাটে। ওরা জানে না ওদের ভবিষ্যৎ কি?

ছিন্নমূল বা পথশিশুদের অনেকেই হয়তো সুবিধা কথাটির অর্থই বোঝে না। স্কুল, উন্নত ভবিষ্যৎ, খাবার, চিকিৎসা এসব সুবিধা দূরে থাক, দিনশেষে একটা নির্দিষ্ট থাকার জায়গা পর্যন্ত তাদের নেই। শহরের বড় রাস্তার ফুটপাতই তাদের ঘরআর বাহির।

সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু হরেক রকম ব্যস্ততায় থাকে। ফুল হাতে কাউকে বলছে, ‘একটা ফুল
নিয়া যান’, নয়তো কেউ বড়
ময়লাভর্তি বস্তা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, না হয় পথে পথেই ভিক্ষা করছে। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হওয়া তো এদের জন্য সাধারণ ব্যাপার।

সুবিধাবঞ্চিত এসব পথশিশুর অনেকেই এসেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে, না হয় জন্ম হয়েছে শহরের কোনো রাস্তার পাশে। এসব হতদরিদ্র শিশুর অনেকেই জানে না তাদের বাবা- মার কথা।

বিশ্লেষকরা জানান, সাধারণত সবাই বোঝে যেসব শিশু রাস্তায় থাকে, যারা ভাসমান তারাই পথশিশু। এক কথায় ঠিকানাবিহীন। বাবা-মার সঙ্গে বিচ্ছেদ। আজ এখানে তো কাল ওখানে। কোনো জায়গাতে স্থায়ী হয় না। তবে যে হারে পথশিশুর সংখ্যা বাড়ছে তাতে ২০১৬ সালে এ সংখ্যা
বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ লাখে। ঢাকা-শহরে এ রকম লাখো পথশিশু
রয়েছে, এসব শিশুর জন্য কাজ করছে কিছুসংখ্যক এনজিও।

সংখ্যা এতই স্বল্প যে, এর মাধ্যমে এসব শিশুর অবস্থার কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের কথা
চিন্তা করে এনজিও এর সম্পৃক্ততার পাশাপাশি সরকার এবং দেশের সাধারন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান